ডাকসু নির্বাচনের আগে ঢাবিতে ফের এমফিল প্রোগ্রামের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে স্নাতক, মাস্টার্স বা এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত হতে হবে। তবে সান্ধ্যকালীন কোর্সের কেউ ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না। গত ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সপ্তাহ না পেরোতেই এমফিল প্রোগ্রামের জন্য ফের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ফলে বিশেষ কাউকে সুবিধা দিতে এক বছরে দুবার এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, গত জানুয়ারিতে ২০২৫-২৬ সেশনের আবেদনে কম সংখ্যক প্রার্থী থাকায় ফের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর একবার এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চলতি ২০২৫-২৬ সেশনের আবেদনে গত ১ জানুয়ারি থেকে চলে ওই মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে দুই বছর মেয়াদের এমফিল প্রোগ্রামের প্রথম বর্ষে থাকবে কোর্সওয়ার্ক এবং দ্বিতীয় বর্ষে থিসিস থাকবে বলে উল্লেখ ছিল। তবে রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ (পুনভর্তিসহ) যোগদানের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছর হতে হবে বলে উল্লেখ ছিল।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি চলছে, আবেদন নির্ধারিত ফরমে
জানা গেছে, এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে না কোনও বয়সসীমা। যদিও সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৩০ বছর।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীরা। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে। যিনি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক, মাস্টার্স বা এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত এবং কোনও আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত।
তবে সান্ধ্যকালীন কোর্স, পেশাদার বা এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। একইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সংযুক্ত কলেজ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এদিকে, গতকাল রবিবার (২২ জুন) রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এমফিল প্রোগ্রামের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের মধ্য থেকে তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন করতে বলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়কের অধীনে এমফিল গবেষণার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে প্রার্থীদের। আবেদন ফরম ডাউনলোড শুরু হয়েছে ২২ জুন থেকে চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ, এই ভর্তি আবেদনের সময়সীমা মাত্র ৮ দিন।
বিশেষ কাউকে সুবিধা দিতে এমন সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলে ঢাবির জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারী হামিম ফেসবুকের এক পোস্টে লেখেন, ডাকসুকে কেন্দ্র করে মাস্টার্সের বিভিন্ন বিভাগের রেজাল্ট আটকে রাখা হচ্ছে ব্যক্তি বিশেষকে কেন্দ্র করে। এমনকি নজিরবিহীনভাবে একটি বিতর্কিত ছাত্রসংগঠনের একজন ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিতে একই বছর দ্বিতীয় বারের মতো সাত দিনের জন্য এমফিল প্রোগ্রাম ভর্তির সময় দিয়েছে, যেখানে প্রতিবছর একবারই এমফিলে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পূর্বে নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগের দাবি উঠলেও এবার নিরপেক্ষহীনতা-পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
জানতে চাইলে আজ সোমবার (২৩ জুন) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগে যে বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছিল এবং এখন যে বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে দুটিই ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য। আগের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সংখ্যা খুব কম পড়েছিল। পূর্বের তুলনায় অনেক কম আবেদন পড়ায় দ্বিতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়মের মধ্য থেকেই দ্বিতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। যাতে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হয় সেজন্য।
তবে প্রথম বিজ্ঞপ্তির প্রায় পাঁচ মাস পর নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই আবেদনসংখ্যা সম্পর্কে জানতেন—তাহলে এত দেরি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়তো একটু দেরি হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এখানে অন্যকোনো বিষয় নেই।
বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে ডাকসু নির্বাচনে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে পরিকল্পিতভাবে এ দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এমফিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য এমফিলে ভর্তি হবে, এর সঙ্গে ডাকসুর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।