ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠি

নাম পরিবর্তনের দাবিতে ৪৬ ঘণ্টার আলটিমেটামের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (২১ মে) সকাল ৯টায় ইউজিসি প্রাঙ্গণে এই অনশন শুরু হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি সামনে চলবে।
শিক্ষার্থীদের এই অনশনের মধ্যেই শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক এবং এডটেক ও আইওটি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আকতারুজ্জামান। আজ বুধবার এই খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।
খোলা চিঠি
মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা,
আপনি দেশের শিক্ষা পরিবারের অভিভাবক। তাই বাংলাদেশের ১ম বিশেষায়িত ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি ড. মোঃ আকতারুজ্জামান, প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কাজ করেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ এ। শুরু থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নানামুখী অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। ২০১৬ সালের ২৬শে জুলাই প্রতিষ্ঠিত হলেও আজ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস হয়নি, শিক্ষার্থীরা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করে। নূন্যতম সুযোগ সুবিধা তাদের দেওয়া হয়নি, এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারবে না, বিশেষ করে তৎকালীন সরকার, সাবেক উপাচার্যবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এর দায় নিতে হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এটি দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে এডটেক, আইওটি এন্ড রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মতো সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দিচ্ছে। শত প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে দুটি ব্যাচ ইতিমধ্যে বের হয়েছে এবং চাকরির প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ভাল পারফরমেন্স করছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে আপনার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি'র নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি রাখা হয় এবং শিক্ষার্থীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই সেটাকে সাদরে গ্রহণ করে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটা পরবর্তীতে গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি নামে গেজেট প্রকাশিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। গত ৪-৫ মাস যাবত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ উপায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, আইসিটি ডিভিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকবার তাদেরকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল শব্দটি কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর নিজস্ব সম্পত্তি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের সম্পদ এবং সঠিকভাবে পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হতে পারে। তাই কোনোভাবেই একটি স্থানীয় নাম দিয়ে সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করা ঠিক হবে না। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও মানানসই নাম নির্ধারণপূর্বক ইউনিভার্সিটির দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিবেদক,
ড. মো. আকতারুজ্জামান
সাবেক অধ্যাপক এবং এডটেক ও আইওটি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগীয় প্রধান
গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি ও কারিকুলাম, ডিজিটাল শিক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, মেলবোর্ন, অষ্ট্রেলিয়া