বিতর্কিত তদন্ত নয়, চাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত: কুয়েট শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন—যখন তারা নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন, তখন কেন একটি বিতর্কিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পুরো বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে?
গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আজ ১৫ মে তারা একটি প্রেস ব্রিফিং করে এবং ভিসির বরাবর লিখিত আবেদন জমা দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী উপাচার্য কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি কোনোভাবেই নিরপেক্ষ ছিল না। তারা বলেন, এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের আগেই ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তা জানতে পেরেছেন, এমনকি সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়েছে, যা তদন্ত প্রক্রিয়ার গোপনীয়তা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, ওই তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে অপরাধ স্বীকার করতে চাপ প্রয়োগ করে এবং আন্দোলনকারীদের দমন করতে প্রভাব বিস্তার করে। তারা দাবি করেন, তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ওই বিতর্কিত রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট পুনরায় কার্যকর করা কীভাবে আইনত বৈধ হয়—সে প্রশ্নও তারা তুলেছেন।
তাদের আরও অভিযোগ, তদন্ত চলাকালে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আপোষ করতে চাপ দেওয়া হয় এবং আপোষ না করায় অনেককে ৩৭ জনের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি স্বীকারোক্তি দিতে রাজি না হওয়ায় নির্দোষ শিক্ষার্থীদের নামও ওই তালিকায় রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তদন্ত কমিটির প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে সাবেক ভিসিকে সমর্থন দিয়েছেন এবং ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে “নাটক” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফলে তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত কীভাবে নিরপেক্ষ হতে পারে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
অন্যদিকে ১৫ মে শিক্ষক সমিতির আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাধারণ সম্পাদক ড. ফারুক হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো ঘটনা ঘটে, তখন কি বাইরের কোনো বিচার বিভাগ বা মহল এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেবে?
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ফারুক হোসাইন জানান, এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটির বিচার দেখার জন্য একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে, যেখানে সব বিভাগের প্রফেসররা থাকেন। এই পদ্ধতির ওপর যদি আস্থা না থাকে, তাহলে হয়তো এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে।”
এদিকে এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এরকম তদন্তের নজির রয়েছে। ভিসি চাইলে স্থানীয় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট গ্রহণ করতে পারেন। সেটি ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয় বিচার কার্যক্রম চালাতে পারে।”
তবে এ দাবির বিপরীতে প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ? শিক্ষার্থীর উত্তর, “পূর্ববর্তী তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ থাকায় আমাদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষক নতুন কোনো তদন্তে যুক্ত হতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সেই কারণেই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির দাবি জানাচ্ছি, যাতে নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শিক্ষক-প্রশাসনের অবস্থান থেকে বিষয়টি নতুন করে কুয়েটের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আস্থার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।