৯ মাসেও প্রক্সি-কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি রাবি প্রশাসন

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি-কাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে এলে ১৫ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটি গঠনের ৯ মাস পেরোলেও এখনো জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন জড়িতরা। প্রশাসনের দাবি, অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেবে তারা।
‘রাবিতে চার শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন একই প্রক্সিদাতা’ শিরোনামে প্রকাশিত দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে চারজনকে ভর্তি করিয়েছেন একই প্রক্সিদাতা। তাদের মধ্যে তিনজন বিভিন্ন বিভাগের তিন শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়ন। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস’ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সনি, আইন বিভাগের ফাহিম আল মামুন বর্ণ, ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শোভন। নিউজটা প্রকাশিত হওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এরপর নিউজের সত্যতা প্রমাণে গত ১৫ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমানকে সভাপতি করা হয়। সদস্য করা হয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান ও সাবেক আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্যা। এ ছাড়া সদস্যসচিব হিসেবে আছেন উপরেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসেন।
আরও পড়ুন: সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ শিগগিরই, কমতে পারে আসন
অ্যাডমিট কার্ডের ছবি এডিটের মাধ্যমে জালিয়াতি করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি দপ্তর। তবে বিষয়টি সামনে আসার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে সদুত্তর নেই প্রশাসনের কাছে।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের একজন হলেন ফাহিম আল মামুন বর্ণ। তিনি ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৮২.৬০ স্কোর করে ৪৬তম মেধাস্থান অর্জন করে ভর্তি হন আইন বিভাগে। তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২১১০২১৬১২৬, রোল নম্বর ৫৪১৩৭। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
একই পন্থা অবলম্বন করে ‘সি’ ইউনিটে ৭৯ দশমিক ৭০ নম্বর পেয়ে ভর্তি হন মো. শোভন। বর্তমানে তিনি ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২১১০৯২৯১১২, রোল নম্বর ৭১১০৬। তিনি রাজশাহীর মতিহার থানার বুধপাড়া গ্রামের মো. গোলাম সারওয়ারের ছেলে। তিনি রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার ভাতিজা।
আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাদকচক্র, আসামির স্বীকারোক্তি
‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেহেদী হাসান সনির প্রক্সির মাধ্যমে ৭২ দশমিক ৬৫ নম্বর পেয়ে ১৬তম মেধাস্থান অর্জন করেন। তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২১১০৩৩৩১৭০, রোল নম্বর ৯৬১১৫। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। অতিদ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’