ঢামেকে কান্নার রোল, সাম্যের মৃত্যু মানতে পারছে না পরিবার-সহপাঠী কেউ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আঙিনায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আশপাশের বাতাসেও ভেসে বেড়াচ্ছে বুকফাটা কান্নার শব্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণ শাহরিয়ার আলম সাম্যের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার, সহপাঠীরা, শিক্ষকরা কিংবা রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা। এক সম্ভাবনাময় প্রাণের এমন করুণ অবসান যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে চারদিক। ঢামেকের প্রতিটি করিডোর জুড়ে এখন শুধুই শোক, কষ্ট আর হৃদয়বিদারক আর্তনাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য। ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সহপাঠীরা জানায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত বারোটার দিকে সাম্য, বায়েজিদ ও রাফি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালী মন্দির সংলগ্ন একটি ক্যান্টিনে আড্ডা শেষে বের হচ্ছিলেন। তখনই ঘটে সেই বিভীষিকাময় ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাম্যের মৃত্যুর খবরে তার পরিবার, সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র, শিক্ষক এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন হাসপাতালে। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। সহপাঠীদের কয়েকজনকে হাসপাতালের মেঝেতে গড়িয়ে বিলাপ করতে দেখা যায়। চারদিকে শুধু আহাজারি, কান্না আর শোকের মাতম। কেউই এই মর্মান্তিক মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না।
নিহত সাম্যের সহপাঠী আহত বায়েজিদ বলেন, আমরা তিনজন ক্যান্টিন থেকে বের হচ্ছিলাম, হঠাৎ ৮-১০ জনের একটি দল আমাদের ঘিরে ফেলে। তারা কোনো কথা না বলেই হামলা চালায়। সাম্যকে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে সে দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আমরা তখনই তাকে মেডিকেলে নিয়ে আসি, কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দেন, আর কিছু করার নেই।
তার আরেক সহপাঠী রাফি বলেন, রাত বারোটার কিছু পরে সাম্য মোটরসাইকেলে করে মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। সেই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। হঠাৎই সাত-আটজন ব্যক্তি অতর্কিতে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাম্যকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
তারা জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে তখন আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়ার খবর শুনে আরও ভেঙে পড়েছেন সবাই।
এদিকে হাসপাতালের মর্গে ছেলের নিথর দেহ দেখতে ছুটে আসেন শাহরিয়ার আলম সাম্যের বাবা। সন্তানের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বুকভাঙা আর্তনাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিবেশ আরও ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি। পাশে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাম্যের মা—নিঃশব্দ কান্নায় ভিজে যাচ্ছিল তার মুখ, আর অঝোরে গড়িয়ে পড়ছিল চোখের পানি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) মো. ফারুক বিষয়টি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতে সহপাঠীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসক পরিক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হলে প্রভোস্ট কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, কোন এক বহিরাগত মোটরসাইকেল চালক বাংলা একাডেমির সামনে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায়। আমি বর্তমানে হাসপাতালে তার লাশের পাশেই দাঁড়িয়ে আছি।