facebook icon

দশ মাস ধরে লাপাত্তা শাবিপ্রবির সাবেক প্রো-ভিসি ও প্রক্টর, পাচ্ছেন বেতন-ভাতা

মো. মোফাজ্জল হক, শাবিপ্রবি প্রকাশ: 18 June 2025, 08:04 PM , আপডেট: 19 June 2025, 05:20 PM
অধ্যাপক কবির হোসেন ও কামরুজ্জামান চৌধুরী
অধ্যাপক কবির হোসেন ও কামরুজ্জামান চৌধুরী   © সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবির হোসেন দীর্ঘ দশ মাস ধরে কার্যত লাপাত্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না, অনুপস্থিত আছেন অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ডেও। তবে এতদিন ধরে কোনো কাজ না করেও নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন আওয়ামী রাজনীতিতে ব্যাপক সমালোচিত প্রভাবশালী এই অধ্যাপক।

জানা যায়, হাসিনা পতনের পর গত বছরের ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। পদত্যাগের পর বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিলেও সুরমা আবাসিক এলাকায় মাঝেমাঝে তার দেখা মেলে বলে জানিয়েছেন অনেকে। 

এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সময়ে পদ-পদবীর লোভে তিনি উদ্ভট বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে বেশ সমালোচনার জন্ম দিতেন। সাবেক ভিসি ফরিদ উদ্দিনের পর নিজের ভিসি পদ পাকাপোক্ত করার জন্য এমন দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন বলে মনে করেন অনেক সিনিয়র অধ্যাপক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটরিয়ামে বক্তব্য তিনি আওয়ামীগের হয়ে ভোট চাইতেন। হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে নিজেদের অস্তিত্ব  থাকবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন, 'বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে কিন্তু রগ কেটে দিবে, গলা কেটে দিবে। এজন্য আমি বলতে চাই, আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচনের ১৫ দিন আগে এলাকায় গিয়ে মানুষকে বুঝানো। যাতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়।' অনেক বক্তব্যে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের প্রতি উসকানি এবং ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: সভায় বসেও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সাত কলেজ 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপ-উপাচার্য থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগে নিজ এলাকা কুমিল্লার স্বজনপ্রীতি মনোভাব দেখাতেন। ভিসি বিরোধী আন্দোলনের পর নিজের খুঁটির জোর মজবুত করতে সম্ভ্রান্ত আওয়ামী পরিবারে কুমিল্লার সন্তান  হওয়ায় উপাচার্যের দুধের মাছি হয়ে নিয়োগ পান কবীর হোসেন। উপ-উপাচার্য হওয়ার পর নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষক আপগ্রেডেশনসহ নানান অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এমনকি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী শহীদ রুদ্রসেন হত্যার আসামিও তিনি। গত বছরের ১৯ আগষ্ট সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখকে প্রধান আসামি করে ৭৬ জনের নামে হত্যা মামলা করা হয়। এতে শাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কবির হোসেন ও প্রক্টর অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরীকে আসামি করা হয়। 

এদিকে দীর্ঘ দশ মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরি। তিনিও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগ।

আরও পড়ুন: ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভাস্কর্যটি 

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের পরিচালক সোহেল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পূর্বের ন্যায় সাবেক প্রো-ভিসি ও প্রক্টর বেতন ভাতা পাচ্ছেন। তবে কোনো ধরনের ছুটি নিয়েছেন কি না এটা বিভাগীয় প্রধান এবং রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আজিজুল বাতেন বলেন, ‘সাবেক উপ-উপাচার্য প্রায় দুই মাস আগে ‘সাবেটিকেল লিভ’ বা অধ্যয়ন ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন। ছুটি মঞ্জুর করেছেন কি না এটা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়মিত বিভাগের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং গবেষণা ও বিভিন্ন কাজে তত্ত্বাবধান করছেন।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কবীর হোসেনকে ফোন দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, ‘কিছুদিন আগে সাবেক উপ-উপাচার্য সাবেটিকেল লিভের জন্য আবেদন করেছিল আমরা এখনো মঞ্জুর করিনি।’

বিভাগে যোগদান করতে সাবেক উপ-উপাচার্যকে শোকজ করেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।’

College থেকে আরও পড়ুন

ads
সর্বশেষ সংবাদ