facebook icon

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

শাবিপ্রবিতে অযোগ্য প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ প্রমাণিত, তবু পেলেন যোগদানের চিঠি

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি প্রকাশ: 17 May 2025, 02:49 PM , আপডেট: 21 May 2025, 10:23 AM
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা   © টিডিসি ফটো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) মো. তাজবিউল ইসলাম নামের এক অযোগ্য প্রার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও বিভাগের যোগদানের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শনিরবার (১৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়েছে। সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে বাইরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন পিএমই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত প্রশাসন অযোগ্য প্রার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। এতে নিজেদের বিভাগের যেমন মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এমনকি আজকের মধ্যে নিয়োগ বাতিল না হলে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

পিএমই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘আমাদের বিভাগে তাজবিউল ইসলাম নামের একজন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যিনি নিয়োগের যোগ্যতা পূরণ করেননি। গত (২৩৫তম) সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে তার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে এবং তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তিনি কোনো উত্তর দেননি। আমাদের একটাই দাবি, এই অযোগ্য শিক্ষককে আমরা ক্লাসে দেখতে চাই না। যদি তার নিয়োগ বাতিল না হয়, তাহলে আমরা ক্লাস বর্জন করব।’

এ ব্যাপারে পিএমই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রমাণিত ও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও এই ক্যান্ডিডেটকে চিঠি দিয়েছে বিভাগে যোগদান করার জন্য। আমরাও একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। দীর্ঘদিন আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরাও দাবি জানিয়ে আসছে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

সিন্ডিকেট সভা চলমান থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পিএমই বিভাগে প্রভাষকের একটি পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে পাঁচজন আবেদন করেন। ভাইভা দেন চারজন। তাদের মধ্যে মো. তাজবিউল ইসলাম নামের এক প্রার্থী ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি), শিবপুর থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী। স্নাতকে তিনি সিজিপিএ ৭.৩৫ অর্জন করেন। ভারতের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট সিজিপিএ ১০ পয়েন্টে হিসাব করা হলেও শাবিপ্রবিসহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ৪ পয়েন্টের।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আবেদনকারীর যোগ্যতা চাওয়া হয় স্নাতক (সম্মান/ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ কমপক্ষে ৩.৫০। কিন্তু তাজবিউলের স্নাতকের সিজিপিএ ৭.৩৫-কে সিজিপিএ ৪-এ পরিবর্তন করলে তা ৩.৫০-এর চেয়ে কম হয়। তবে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় মো. তাজবিউল ইসলামকে।

এ নিয়ে গত বছরের ৯ অক্টোবর আইপিই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মুকিত মোহাম্মদ মোকাদ্দেছকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৫ মার্চ  বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৫তম সিন্ডিকেট সভায় পিএমই বিভাগে প্রভাষক পদে তাজবিউল ইসলামকে নিয়োগের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন ও আর্থিক সুবিধা বন্ধ করে কেন তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে না, সে ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি লিখিত জবাব প্রাপ্তির পর সে বিষয়ে আইন উপদেষ্টার মতামত নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরই মধ্যে গত ১৪ মে বিভাগে যোগদানের জন্য তাজবিউলকে চিঠি দোওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানির পর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দেখা দিয়েছে।

ads
সর্বশেষ সংবাদ