ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই: উপদেষ্টা মাহফুজ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নির্বাচন কবে হবে, এই প্রশ্নে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সংশয় দেখা যায়। ঠিক তখনই অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি নির্বাচন ইস্যু ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরের মতবিরোধ, লীগ নিষিদ্ধের আইনগত প্রক্রিয়া এবং ছাত্রদের ভূমিকাসহ সাম্প্রতিক আন্দোলন-সংক্রান্ত নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ ব্লকেড
ওই স্ট্যাটাসে মাহফুজ আলম বলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এ আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। নাহিদ- আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসাবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন প্রবীণ উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত পশ্চাতপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কিনা।
গত জুলাই গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের জেরে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারে তিনজন ছাত্রনেতা উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হন। সেই সময় থেকেই আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে নিষিদ্ধের দাবি উঠে আসে।
তবে সম্প্রতি সরকার বিরোধী জোট এবং কিছু নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরব হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মাহফুজ আলম লেখেন, দল হিসাবে লীগকে নিষিদ্ধ করার কয়েকটা আইনি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রাথমিক ঐকমত্য হয় যে, ফ্যাসিবাদ দূর করতে ও ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আমরা সেগুলো অনুসরণ করব। গতকাল বিকালে কথা হয়েছে। দল হিসাবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
উপদেষ্টা মাহফুজ তার পোস্টে অনুযোগ করে বলেন, মিথ্যা বলা বন্ধ করুন। ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের দুই মাস টালবাহানা নিয়ে আমরা বলব। ছাত্রদের দল ঘোষণার প্রাক্কালে আপনারা দলীয় বয়ানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। সমস্যা নেই, আমরাও চাই সবাই স্বীকৃত হোক। কিন্তু, এখন সেটাও হতে দিবেন না। দোষ আমাদেরও কম না। আমরা আপনাদের দলীয় প্রধানের আশ্বাসে আস্থা রেখেছিলাম।
তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারেনা বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি, তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন। সেই আগস্ট থেকেই আমরা জাতির জন্য যা ভালো মনে করেছি, সবার পরামর্শ নিয়েই করেছি। বরং, উক্ত দলকেই আমরা বেশি ভরসা করেছি। সবার আগে উনাদের সাথেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
পোস্টের শেষে তিনি রাজনৈতিক ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়ে লেখেন, আমরা উক্ত দলকে বিশ্বাস করতে চাই। উক্ত দলের প্রধানকে বিশ্বাস করতে চাই। উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি। উক্ত দলকে নিয়ে কে কি বলবে জানি না কিন্তু আমরা চাই উক্ত দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক। দেশপ্রেমিক ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিলে ছাত্ররা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উনাদের সাথে চলবেন। ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এ প্রজন্মকে হতাশ করবেন না। এ প্রজন্ম এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।