এই প্রথম ঈদ, যখন জবাব দিতে পারবো ‘কোথায় পড়ো?’

ঘুরে ফিরে প্রতিবছরই আনন্দ নিয়ে আসে ঈদ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে যখন প্রথম ঈদ আসে, তখন এই অনুভূতির রং হয় একেবারে ভিন্ন। নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিচয়, নতুন বন্ধুত্ব আর জীবনের নতুন গন্তব্যে পা রাখার পর প্রথমবার বাড়ি ফেরা যেন এক আবেগঘন অধ্যায়। বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ঈদ এ বছর কেবল উৎসব নয়, বরং স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ ছুঁয়ে ফেলার পর নিজ গৃহে ফিরে গিয়ে জীবনের নতুন বাস্তবতা অনুভব করার এক পরিপূর্ণ উপলক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের সেই আনন্দ অনুভূতি তুলে ধরেছেন তৌফিকুল ইসলাম আশিক।
স্বপ্ন জয়ের অনুভূতি নিয়ে ঈদ
এবারের ঈদের আনন্দ আমার কাছে সব চেয়ে ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সেকেন্ড টাইমার হওয়ায় এবার প্রায় দুই বছর পর আমি অনেক আনন্দের ঈদ উদ্যাপন করতে যাচ্ছি, যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
বিশ্ববিদ্যালকে নতুন জীবনের শুরু, আর সেই জীবনের প্রথম ঈদে বাসায় ফেরার আনন্দ একেবারে অন্যরকম। দীর্ঘদিন পর নিজ আঙিনায় ফিরে এসে যেন মনটা শান্তি খুঁজে পেয়েছে। শহরের ব্যস্ততা আর পড়াশোনার চাপ থেকে একটু মুক্তি নিয়ে পরিবারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো যে কতটা মধুর! মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ, ছোট ভাইবোনদের সাথে খেলাধুলা, পুরোনো বন্ধুদের সাথে গল্প—সবকিছু মিলিয়ে ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে এবার। পরিবারের সবার দ্বিগুণ ভালোবাসা পাচ্ছি। আম্মুর আমার প্রতি নতুন রকমের এক আবেগ যা আগে আমি অনুভব করিনি। তবে ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার ভাবনাটাও কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও নতুন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। ভার্সিটিতে ইতোমধ্যে আমাদের সিনিয়র এবং টিচার দের সঙ্গে অনেক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
- জাইমা জেরিন সোহা
মেরিন ফিশারিজ এন্ড অ্যাকুয়াকালচার বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ঈদ: এক নতুন আবেগ
বিশ্ববিদ্যালকে ভর্তির পর প্রথমবারের মতো ঈদে বাড়ি ফিরছি—এই অনুভূতিটা কেমন যেন অন্যরকম! স্কুলকলেজের চেনা গণ্ডি পেরিয়ে এবারের ঈদে যোগ হয়েছে ক্যাম্পাসের নানান স্মৃতি। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়া, আবার হোস্টেলের রুম পাশাপাশি রুমমেটের অভাবও টের পাই। ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা মাঠ-ঘাট, নদী—সবকিছুই যেন নতুন চোখে দেখা।
এবারের ঈদে পুরোনো বন্ধুদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বন্ধুরাও এসেছে জীবনে। কেউ কেউ দূর শহর থেকে ফিরেছে, কেউবা প্রথমবারের মতো পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা বুঝতে পারছে। সবার গল্পে মিশেছে একটু বিষাদ, একটু আনন্দ। রাতের তারার নিচে বসে মনে হয়, এই তো সবে শুরু—জীবনের নতুন এক পর্ব। ছুটির দিনগুলো কী দ্রুতই না কেটে যায়! বাবা-মায়ের রান্না, ছোট ভাইবোনের দুষ্টুমি, আত্মীয়দের আদর—সবকিছুই এবার আরও বেশি উপভোগ করছি। কিন্তু জানালার পাশে বসে ভাবি, ক্যাম্পাসে ফিরলে আবার সেই ব্যস্ততা, ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, আর রাত জেগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। মনটা একইসাথে কাঁদে আর হাসে।
- মো: ফরহাদ শেখ
নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড অফশোর ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ
প্রথম ঈদ যখন আমি সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো
ক্লাসের ব্যস্ততা,নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুবান্ধব- সবকিছুর মাঝেও ঈদের ছুটির অপেক্ষা ছিলো ভেতরে ভেতরে। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমার প্রাণপ্রিয় মায়ের স্মৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর লগ্নে বাবাকে পাশে পেলেও মাকে পাশে পাওয়ার সৌভাগ্য খুব অল্প বয়সে হারিয়ে ফেলি। বাবা খুব গর্ব করে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা আত্মীয়দের কাছে বলেন।এবারই প্রথম ঈদ যখন আমি সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো আলহামদুলিল্লাহ। এই বদলে যাওয়া পরিচয়টাই এ বারের ঈদে আমার সবচেয়ে বড় উপহার।
এবারে বন্ধুবান্ধবের পরিধিও বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর। স্কুল কলেজের বন্ধুদের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু এবং সিনিয়র ভাইয়া -আপুরা।আশা করি সকলের সাথে আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আমরা এবার ঈদে ২ সপ্তাহ ছুটি পেয়েছি যা খুবই দরকার ছিলো পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও নিজের সাথে সময় কাটানোর জন্য। তবে ছুটির শেষ দিনেই মন টানবে ক্যাম্পাসের দিকে- ক্যান্টিন, লাইব্রেরি আর সেই পরিচিত মুখগুলো ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা যেন ঈদের পরের আনন্দ।
- মাহমুদা আক্তার
পোর্ট এন্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
শেষদিনে ক্লাস না থাকায় সিনিয়রদের কাছে সালামি চাওয়া হয়নি
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মাত্র শুরু হয়েছে—বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে কাটানো এই এক মাসেই কিছু মানুষ অচেনা থেকে আপন হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কার্যদিবসে আমাদের কোনো ক্লাস না থাকায় সিনিয়রদের কাছ থেকে সালামি চাওয়া আর হলো না!
ঈদের পর ক্যাম্পাসে ফিরেও হয়তো ছোটখাটো ঈদ পুনর্মিলনী হবে আমাদের। এই প্রথম ঈদ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় আর বন্ধুত্ব দুই মিলে তৈরি করছে এক নতুন অনুভূতি।
ছুটি শেষেই আবার ফিরব পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, যেখানে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে উঠছে আমার দ্বিতীয় বাড়ি—আমার বিশ্ববিদ্যালয়।
- তাছনিয়া তাহসিন ইভা
মেরিটাইম ল এন্ড পলিসি
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ঈদের ছোঁয়া
ঈদ প্রতি বছরই আসে। তবে এবারের ঈদটা ভিন্ন। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ঈদ এটি। এক মাসও পূর্ণ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্লাস করার। এরই মাঝে ইদের ছুটি পেয়েছি। এই ঈদ আরো একটি কারণে ভিন্ন। এই প্রথমবার ছুটির সময়ও স্যারের নিকট হতে এসাইনমেন্ট পাচ্ছি। শেখার কোনো শেষ নেই শুনেছি। শেখার যে কোনো বিরতি নেই, সেটাও দেখলাম। তবে এটাও একটা ভালো দিক, দীর্ঘসময় অবসর না থেকে কিছু প্রোডাক্টিভ কাজ করাও উত্তম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যস্ত ও শিক্ষণীয় সময়টাই আমার নিকট পছন্দের। ছুটি শেষ হলে সেই সময়ে ফিরে যেতে পারবো এটা ভাবতেও ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে ভার্সিটির বড় ভাইবোনদের শাসন। এটা এক অন্যরকম অনুভূতি। ইদের এই ছুটিতে দীর্ঘ সময় পেয়েছি। বাংলা সাহিত্যের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও নাটক পড়ে সময় কাটাচ্ছি। যেহেতু বই পড়া আমার পছন্দের, সেহেতু নিজের শখও পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি সেমিস্টারের পড়াশোনাও হচ্ছে। ইদের অনুভূতির শিকড় মহাসমুদ্রের মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চেয়েও গভীরতর। যেহেতু শব্দ সংখ্যা হতে হবে সীমিত, তাই শেষ করছি ইদ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম কবিতা উল্লেখ করে –
‘কুহেলি তিমির সরায়ে দূরে
তরুণ অরুণ উঠিছে ধীরে
রাঙিয়া প্রতি তরুর শিরে
আজ কি হর্ষ ভরে!
আজি প্রভাতের মৃদুল বায়
রঙে নাচিয়ে যেন কয়ে যায়
মুসলিম জাহান আজি একতায়
দেখ কত বল ধরে।’
- খায়রুল ইসলাম
পোর্ট এন্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ