facebook icon

চরম আবাসন সংকটে ববি শিক্ষার্থীরা, সুযোগ নিচ্ছে স্থানীয় বাড়িওয়ালারা

তামজিদ হোসেন মজুমদার, ববি প্রকাশ: 28 May 2025, 07:37 PM , আপডেট: 29 May 2025, 01:34 AM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)   © সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। শুরু থেকেই কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় দিন দিন সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাহিদার তুলনায় আবাসন, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক, গবেষণাগার ও গ্রন্থাগারের চরম ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বড় সংকট শিক্ষার্থীদের আবাসন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে জায়গা পাচ্ছেন ২ হাজারেরও কম শিক্ষার্থী। ফলে বাকি প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে, যার সুযোগ নিচ্ছেন স্থানীয় বাড়িওয়ালারা।

জানা গেছে, বরিশাল শহরের গড় ফ্ল্যাট ভাড়া যেখানে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। এমনকি এক কক্ষবিশিষ্ট রুমের জন্যও অনেক বাড়িওয়ালা ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করছেন। এতে আর্থিকভাবে চাপে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

ফলাফল হিসেবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ব্যয়ের ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আবাসন সংকটের কারণে আমাদের বাহিরে বাসা নিতে হয়। অথচ সেই বাসা নিতে গিয়ে ভাড়া গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই ব্যয় আমাদের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রদের জন্য রয়েছে দুটি পাঁচতলাবিশিষ্ট হল। কিন্তু সেখানে প্রতিটি রুমে ৮ জন করে শিক্ষার্থী এবং অনেক সময় এক শয্যায় দুজনকে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে, ছাত্রীদের জন্য রয়েছে দুটি হল—একটি পাঁচতলা এবং অন্যটি ছয়তলা বিশিষ্ট। তবে এই হলগুলোও ছাত্রীদের সংখ্যার তুলনায় অনেকটাই অপর্যাপ্ত।

শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হলের পরিবেশ ও ঘনত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। বেশি শিক্ষার্থী থাকার কারণে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে, মানসিক চাপও বাড়ে বলে জানান অনেকে।

শেরে বাংলা হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান অনিক সম্প্রতি হল ছেড়ে বাহিরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এক মাস চেষ্টা করেও তিনি বাসা ভাড়া নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘হলের পরিবেশে এক বেডে দুজন করে থাকতে হয়, যা খুবই অস্বস্তিকর। পড়াশোনার পরিবেশও নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিই বাহিরে বাসা নেব। কিন্তু এক মাস খুঁজেও ছাত্রবান্ধব কোনো বাসা পাইনি। বাড়িওয়ালারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকবার আবাসন সংকট নিরসনের জন্য নতুন হল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি কোনো প্রকল্প। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি শিক্ষক সংকটও দিন দিন প্রকট হচ্ছে, যা শিক্ষার মানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ভাষ্য, “ববি যেন একটি অস্থায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ১৪ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব পরিচিতি বা কাঠামোগত পরিপূর্ণতা গড়ে উঠেনি। এর দায় শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের নয়, এটি একটি প্রশাসনিক ও নীতিগত ব্যর্থতা।”

English Medium থেকে আরও পড়ুন

ads
সর্বশেষ সংবাদ