জবিতে জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, অভিযুক্ত কর্মচারীকে বরখাস্ত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক শাখার সিল ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্বাক্ষর নকল করে জাল রশিদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ওই দপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নাজমুল। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৩ মে দপ্তরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করে নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে তার কাছ থেকে ‘নগদ গ্রহণ’ নামে একটি নকল ব্যাংক সিল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৫ মে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ওই সিলটি জব্দ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল স্বীকার করেন, তিনি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রায় এক দশক ধরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল। শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত রশিদের মাধ্যমে ফি জমা ও কাগজপত্র গ্রহণের কাজ করেন তিনি। অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে কাগজ উত্তোলনের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের নিজে রশিদ পূরণ করে ব্যাংকে জমা দেওয়ার প্রস্তাব দিতেন। শিক্ষার্থীরা তার ওপর আস্থা রেখে তাকে টাকা ও রশিদ প্রদান করলেও, তিনি তা ব্যাংকে জমা না দিয়ে জাল সিল ব্যবহার করে নিজেই আত্মসাৎ করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সার্টিফিকেট তুলতে গিয়েছিলাম। জরুরি কাগজ লাগছিল, তখন নাজমুল আমাকে বলেন তিনি রশিদ জমা দিয়ে দ্রুত কাজটি করিয়ে দেবেন।’
আরও পড়ুন: গুচ্ছভুক্ত ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫৭৪২৫ জন
এমন অভিযোগ শুধু এক শিক্ষার্থীর নয়। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, নাজমুল একই কৌশলে তাদের কাছ থেকেও টাকা ও রশিদ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র দাবি করে, এ অনিয়মে কেবল নাজমুল একা নন, তার সঙ্গে আরও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকতে পারেন। তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রশিদ ও অর্থ নিয়ে নাজমুলের প্রস্তুত করা জাল সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করতেন। যদিও এ ব্যাপারে এখনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, রশিদগুলোর স্বাক্ষর ও সিল ভিন্ন হওয়ায় সন্দেহ হয়। পরে যাচাই করলে দেখা যায়, কিছু রশিদ নকল এবং সেখান থেকে একটি নকল সিল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকেও যাচাই করে কয়েকটি রশিদ জাল বলে চিহ্নিত হয়েছে। যাচাই-বাছাই ও তদন্ত এখনো চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত নাজমুল বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। আমি স্যারের কাছে মাফ চেয়েছি। সিলও দিয়ে দিয়েছি। কীভাবে ধরা পড়লাম, বুঝতেই পারিনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক আরিফুল হক ভূঁইয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে সাতটি ভাউচার পাঠায়, যার মধ্যে চারটিতে ভুয়া সিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডাকসু ইস্যুতে ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাবনা উঠলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, জালিয়াতির কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। কাগজপত্র রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।