facebook icon

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ‘গণতন্ত্র: সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার

প্রকাশ: 02 June 2025, 06:09 PM , আপডেট: 09 June 2025, 08:37 PM
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে   © সংগৃহীত

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বর্তমান পরিস্থিতি, সংকট এবং সম্ভাব্য উত্তরণ নিয়ে আলোচনার জন্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে আয়োজিত এই সেমিনারের শিরোনাম ছিল `বাংলাদেশে গণতন্ত্র: সংকট ও উত্তরণ'।

সেমিনারটির আয়োজন করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি টিচার্স’ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পুটাব)।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, যিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং পুটাবের সভাপতি।

অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক এস.কে. তৌফিক এম হক, পরিচালক, এসআইপিজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি; অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ার, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি; অধ্যাপক ড. শিবলি আহমেদ খান, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, এআইইউবি ও পুটাবের সাধারণ সম্পাদক; জোনায়েদ সাকি, প্রধান সমন্বয়ক, গণসংহতি আন্দোলন; অধ্যাপক ড. এম. মো. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, উপাচার্য, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি; অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়; এবং ববি হাজ্জাজ, চেয়ারম্যান, এনডিএম ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার। 

এছাড়াও, জুলাই শহীদ মীর মুগ্ধর পিতা মীর মুস্তাফিজুর রহমান এবং জুলাই শহীদ জাবির ইব্রাহিমের পিতা মো. কবীর হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, যেখানে তিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্রের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের মাঝে দোদুল্যমান থেকেছে। তিনি সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা ও নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে গণতন্ত্রের জন্য প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন। রবার্ট ডাল ও অন্যান্য রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের তত্ত্বের আলোকে তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামোর দুর্বলতা তুলে ধরেন এবং বলেন, দেশের নিজস্ব রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে একটি উপযোগী গণতান্ত্রিক মডেল গড়ে তোলা জরুরি।

প্রধান অতিথি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, গণতন্ত্র নিখুঁত না হলেও এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জন অধিকার সুরক্ষার সর্বোত্তম উপায়। গণতন্ত্র ভৌগোলিকভাবে সীমাবদ্ধ নয় এবং ‘স্থানীয় প্রেক্ষাপট’-এর নামে কর্তৃত্ববাদকে বৈধতা দেওয়া যায় না। “সত্যিকারের গণতন্ত্র,” তার ভাষায়, “মতের ভিন্নতা ও কণ্ঠের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।” তিনি সতর্ক করেন, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, প্রতিষ্ঠানগত ভারসাম্যের হ্রাস এবং সত্যকে দমন করার প্রবণতা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আজকের আলোচনা ছিল অত্যন্ত তাত্ত্বিক এবং জ্ঞানে পরিপূর্ণ। গণতন্ত্র কেবল প্রতিষ্ঠানগত বিষয় নয়, এটি অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ ও আত্মসংযমের প্রশ্ন। ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা পাই—নেপোলিয়ন জর্জ ওয়াশিংটনের একজন ভক্ত ছিলেন এবং তাঁর কক্ষেও ওয়াশিংটনের ছবি রাখা ছিল। কিন্তু যখন ওয়াশিংটনকে সাম্রাজ্যিক ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়, তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন এবং দুই মেয়াদের পর নিজে থেকেই পদত্যাগ করেন, রিপাবলিকান গণতন্ত্রের চেতনাকে দৃঢ় করেন। অপরদিকে, নেপোলিয়ন নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন এবং শেষ পর্যন্ত সেই বিপ্লবকেই বিশ্বাসঘাতকতা করেন যার মাধ্যমে তিনি উঠে এসেছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, দেশের গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একাডেমিয়া ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মুক্ত ও গঠনমূলক সংলাপ অপরিহার্য। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সুশাসন ও নীতিনির্ধারণে গবেষণাভিত্তিক অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

Madrasah থেকে আরও পড়ুন

ads
সর্বশেষ সংবাদ