বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা: পশু নয়, কোরবানি হোক আমাদের ভেতরের ‘পশুত্ব’

বুটেক্স শিক্ষার্থী
বুটেক্স শিক্ষার্থী © টিডিসি

ঈদুল আজহা—ইসলামী সংস্কৃতির অনবদ্য এক উৎসব। এটি কেবল কুরবানির আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.)-এর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের চিরন্তন স্মৃতিকে ধারণ করে আমাদের হৃদয়ে জাগায় ত্যাগের মহৎ বোধ। প্রতি বছর এই দিনে মুসলিম উম্মাহ যে কুরবানি দেয়, তা আমাদের শেখায়—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু উৎসর্গ করাও এক ইবাদত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদুল আজহা এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতা। পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকা, ব্যস্ত একাডেমিক জীবনের ক্লান্তি, আর তার মাঝেই ঈদে ফিরে পাওয়া কিছু মুহূর্তের প্রশান্তি—সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে গভীর অনুভূতির একটি উপলক্ষ। কেউ কেউ পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন, কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়েই কাটান ঈদের দিন। আবার অনেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশ নিয়ে গরিব-দুঃখীদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেন।

বুটেক্স-এর শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন এবারের ঈদুল আজহা? তাদের ভাবনার মাঝে আত্মত্যাগের মর্মবাণী, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং আত্মিক উপলব্ধির গভীর ছাপ।

৪৮তম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শিহাব বলেন, “ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থার প্রতীক। ইব্রাহিম (আ.)-এর কুরবানির ঘটনা আমাদের শেখায়—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয়তম জিনিসও উৎসর্গ করা যায়। ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য নিহিত থাকে সেই মুহূর্তে, যখন আমরা কুরবানির মাংস সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে ভাগ করে নিই। ত্যাগের এই শিক্ষা যেন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়—সেটাই ঈদের আসল তাৎপর্য।”

আরও পড়ুন: শহীদ ও আহত পরিবারের মাঝে শাবিপ্রবি শিবিরের কোরবানির গোশত বিতরণ

একই ব্যাচের শিক্ষার্থী শিবলি সাদিক উৎপল বলেন, “ঈদুল আজহা আমাদের জীবনে আনয়ন করে বিশ্বাস, কর্তব্যবোধ এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার শিক্ষা। ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মধ্যে আমরা দেখতে পাই নিঃস্বার্থ আনুগত্য ও আত্মিক শক্তি। এই ঈদ আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃত ভালোবাসা মানে নিজের প্রিয় জিনিসকেও উৎসর্গ করতে পারা। ঈদ মানে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি পরিবার, সমাজ এবং আত্মার সঙ্গে আত্মিক সংযোগ গড়ে তোলার এক অনন্য উপলক্ষ।”

৪৯তম ব্যাচের টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ রায়হান ওহি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার চাপের মাঝে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়, কিন্তু ঈদের সময় সেই দূরত্বটুকু ঘুচে যায়। কোরবানির ঈদ মানেই হলো হাটে গিয়ে পশু দেখা, দামাদামি করা, আর পশুকে লালন-পালনের মাঝে এক মায়াবী সম্পর্ক গড়ে ওঠা। সেই মায়া ছিঁড়ে প্রিয় পশুটিকে কুরবানি দেওয়া—এ এক অসাধারণ শিক্ষা। ঈদের দিন মাংস ভাগ করে দেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, স্ট্রিটফুড খাওয়া—সব মিলিয়ে ঈদ যেন ক্লান্ত জীবনের মাঝে প্রশান্তির এক নতুন আলো।”

৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাফায়েত হোসেন বলেন, “আমার কাছে ঈদুল আজহা মানে নিজেকে নতুন করে প্রশ্ন করা—আমি কী সত্যিই কিছু ত্যাগ করেছি? নাকি শুধুই বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত? গরু জবাই কেবল বাহ্যিক দিক, কিন্তু তার অন্তর্নিহিত অর্থ হলো নিজের ভেতরের অহংকার, লোভ আর স্বার্থপরতা কোরবানি দেওয়া। ঈদ আমাকে শিখিয়ে দেয়—ত্যাগ দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির রূপ। ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই প্রকাশ পায়, যখন আমরা অন্তর থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় আত্মাকে শুদ্ধ করার চেষ্টায় থাকি।”

পবিত্র ঈদুল আজহার মূলতত্ত্ব শুধু পশু কোরবানিতে নয়—বরং অন্তরের শুদ্ধতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, পরিবার ও সমাজের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই এর মহত্ব নিহিত। বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফুটে উঠেছে সেই চেতনারই এক সংবেদনশীল প্রতিচ্ছবি।