ঈদে বাড়িতে নয়, উৎসবের ব্যস্ততা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন নিস্তব্ধ ক্যাম্পাস
- ০৯ জুন ২০২৫, ০১:০২

ঈদ মানেই উৎসব—সকালে আতরের সুগন্ধ, নতুন জামার আনন্দ, প্রিয়জনের মুখে হাসি। তবে এমন কিছু মুখ আছে, যাদের ঈদের সকালে ‘নতুন পোশাক’ নয়, বরং ইউনিফর্মই হয় তাদের উৎসবের পরিচয়। পরিবার নয়, তাদের সঙ্গী হয় দায়িত্ব আর কর্তব্য।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) নিরাপত্তাকর্মী কৃষ্ণ, নয়ন, রিপন ও রমজান আলী—এই চারজন সেই নিঃশব্দ প্রহরী, যারা উৎসবের ব্যস্ততা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন নিস্তব্ধ ক্যাম্পাস।
কৃষ্ণ ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে মন চায়, চোখে ভেসে ওঠে পরিবারের মুখ, কিন্তু ঠোঁটে আসে না অনুযোগ। তিনি বলেন, “মন তো খারাপ হয়, কিন্তু দায়িত্ব আগে। এই ক্যাম্পাসও তো আমাদের একটা পরিবার।”
রংপুরের নয়ন বলেন, “বছরের অন্য দিনগুলোতে যতটুকু পারি পরিবারকে সময় দিই। কিন্তু ঈদের সময়টা একটু বেশি মনে পড়ে…।” কথাটা বলতে বলতে চোখ নামিয়ে ফেলেন তিনি।
নিলফামারির রিপন মনে করেন, “ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল সাদা পাঞ্জাবি, গরুর হাট আর মায়ের রান্না। এখন ঈদের সকালে ইউনিফর্ম পরে ডিউটিতে বের হই। কাজটাকে ভালোবাসি, কিন্তু মানুষ তো! পরিবার ছাড়া ঈদের দিনটা একটু কষ্টই দেয়।”
সবচেয়ে বেশি আবেগ ছুঁয়ে যায় রমজান আলীর কথা। তাঁর দুই ছেলে বহুদিন ধরেই ঈদের আগেই বাবাকে বাড়ি ফেরার জন্য আবদার করে। “ছেলে দুটো বলছিল, বাবা যেন এবার আগে বাড়ি আসে। কিন্তু কী করব? কাজ ফেলে কীভাবে যাই? পরিবার দূরে, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ও তো একটা পরিবার। এর দেখভাল করাও আমাদের দায়িত্ব।”
যখন পুরো ক্যাম্পাস থাকে নীরব, শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে ঈদের আনন্দে পরিবারের সঙ্গে—তখন এই মানুষগুলো দাঁড়িয়ে থাকেন নির্জন গেটের প্রহরায়, মাথা উঁচু করে।
তাদের চোখে হয়তো ঈদের আলোর ঝলক কম, কিন্তু হৃদয়ে জ্বলে কর্তব্যের দীপ্ত আলো।
এই গল্প শুধুই দায়িত্ব পালনকারীদের নয়, এই গল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসার। তাদের হাতেই ঈদের নিরাপত্তা, আর মনের গভীরে থাকে চুপচাপ একটা অভিমান—যা ঈদের সকালেও বলে যায় “কাজটা আমাদের কাছে শুধু চাকরি নয়, এটা আমাদের সম্মান।”