অভিভাবকহীন বিশ্ববিদ্যালয়
বেতন-বোনাস ছাড়াই ঈদ কাটবে কুয়েটের হাজারো শিক্ষক-কর্মচারীর!
- টিডিসি রিপোর্ট
- ১০ জুন ২০২৫, ১২:০১

সপ্তাহ ধরে অভিভাবকহীন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। গত ২২ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ পদটি শূন্য থাকায় হাজারো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মে মাসের বেতন বন্ধ রয়েছে। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহা বেতন-বোনাস ছাড়াই কাটাতে হতে পারে তাদের। একই সঙ্গে চলতি জুন মাসের বেতন নিয়েও তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর না থাকায় নির্ধারিত সময়ে বেতন পরিশোধ সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলী গত ২২ মে হঠাৎ পদত্যাগ করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী উপাচার্যের অনুমোদন ছাড়া মাসিক বেতন-বিল তৈরি করা সম্ভব নয়। ফলে মে মাসের বেতন কার্যত আটকে গেছে। এখনো কোনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় আগামী জুন মাসের বেতনও ঝুলে থাকার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাছাড়া আগামী ৭ জুন পালিত হতে যাওয়া ঈদুল আজহার বোনাসও বন্ধ রয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন: ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তায় কুয়েট
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একদিকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পাচ্ছে না, অন্যদিকে আমরা পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছি। সময়মতো বেতন না পেলে ঈদের খরচ, ঋণ পরিশোধ, সংসার চালানো—সবকিছুই অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমান ভুইয়া দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপাচার্য ছাড়া কোনো বিল অনুমোদন সম্ভব নয়। তাই বেতনভাতা বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, মন্ত্রণালয় দ্রুত এই সংকটের সমাধান করবে। জটিলতা কেটে গেলে ঈদের আগেই বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) নুরুন আখতার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
আরও পড়ুন: এবার কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি শিক্ষক সমিতির
এদিকে দীর্ঘ বন্ধে নাকাল শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ঈদুল ফিতরের আগে শুরু হওয়া টানা ছুটি ও আন্দোলনের কারণে কুয়েটে গত প্রায় ১০৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা। আগামী ৩ জুন থেকে আবারও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে ঈদুল আযহার ছুটিকে ঘিরে। সব মিলিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ কার্যত ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এর আগে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ডিএসডাবলিউর পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ দুই মাস টানা আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের আমৃত্যু অনশন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমক অব্যাহতি পান।
পরে ১ মে শিক্ষা চুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৯ মে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি আন্দোলন চলাকালে দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন তিনি।