পড়ালেখার চাপেই বিদায় মেডিকেল ছাত্র সজীবের, লিখে গেলেন—‘নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লান্ত, একটু বিশ্রাম চাই'

আত্মহত্যা করে মৃত্যু হওয়া শিক্ষার্থী সজীব বাড়ৈ
আত্মহত্যা করে মৃত্যু হওয়া শিক্ষার্থী সজীব বাড়ৈ © টিডিসি সম্পাদিত

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সজীব বাড়ৈ নামের এক শিক্ষার্থী ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তিনদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হারই মেনেছেন তিনি। শনিবার (২৪ মে) বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

কলেজটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট রেখে গেছেন, যেখানে লেখা ছিল, তিনি নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পড়াশোনার চাপেই তিনি আত্মহত্যার এ সিদ্ধান্ত নেন। 

তার সহপাঠীরা জানান, তারা বর্তমানে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইন্টার্নশিপ করছেন। কিন্তু সজীব তৃতীয় বর্ষেই পড়াশোনা নিয়ে আটকে ছিলেন। 

এ বিষয়ে সুমন হালদার নামে সজীবের এক রুমমেট গণমাধ্যমকে বলেন, পড়াশোনার চাপের কারণে সজিব অসুস্থ হয়ে পড়ত। ক্লাস এবং পরীক্ষায় সে ভয় পেত। সেই কারণেই বৃহস্পতিবার রাতে হতাশা থেকে সে তার শিরায় ক্লোনাজেপাম এবং ফ্লুওক্সেটিন পাউডার ইনজেকশন দেয়। পরে বন্ধুরা তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: ববির নবনিযুক্ত উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের ৮২ দাবি

এর আগেও সজীবের সহপাঠী ও শিক্ষকরা জানান, পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়াসহ নানা কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার জানান, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে কিছুদিন আগে সজীব শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এরপর তাকে বরিশালের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বিকেলে তার মৃত্যু হয়েছে।

৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আজিম জানান, সজীবের ব্যাচমেটরা বর্তমানে ইন্টার্নশিপ করছে, অথচ তিনি এখনও তৃতীয় বর্ষে। এই পিছিয়ে পড়া ও অ্যাকাডেমিক চাপ তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে।

আজিম আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ডিপ্রেশনে ভুগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সজীব। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সজীবের কাছ থেকে একটি ‘নোট’ পাওয়া গেছে বলেও জানান আজিম। নোটে লেখা ছিল “নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত আমি। একটু বিশ্রাম চাই। ক্ষমা করে দিও। এত ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারলাম না।”

উল্লেখ্য, সজীব বাড়ৈ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের বাসিন্দা সুধীর রঞ্জন বাড়ৈর ছেলে।