ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ‘লংমার্চ টু ইউজিসি’ ঘোষণা
- ২১ মে ২০২৫, ১২:৫৩

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ নাম পরিবর্তন করে ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নামকরণ করে গেজেট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার। তবে দেশের বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি যুক্ত না করে গেজেট প্রকাশ করার প্রতিবাদে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এই সংকটের সমাধান না আসায় পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ‘লং মার্চ টু ইউজিসি’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন।
শনিবার (১৭ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে চলা পরিচয় সংকট তাদের অ্যাকাডেমিক ও পেশাগত জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বারবার আবেদন জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সোমবার (১৯ মে) ইউজিসির উদ্দেশ্যে লং মার্চ করবে এবং সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে।
২০১৬ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দেশের ৪১তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রথম বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ স্থাপিত হয়। পরে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।
তবে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নামে অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে এ নাম প্রত্যাখ্যান করে এবং বাংলাদেশ যুক্ত নতুন নামে নামকরণের দাবি জানিয়ে সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামকরণ সাধারণত দেশের নাম অনুযায়ী হয়। যেমন: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ। উল্লিখিত শেষ দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও একই অধ্যাদেশের আওতায় পরিবর্তিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ অংশটি পরিবর্তন করে দেশের নাম বা পূর্বের নামে সংযুক্ত দেশের নাম সংযুক্ত করার পরিবর্তে, সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে জেলার নাম যুক্ত করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়টি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের অংশ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম দেশের নামে হওয়া উচিত, এটি হবে দেশের প্রথম বিশেষায়িত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অতীত নজির অনুযায়ী, দেশের প্রথম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট, প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাকৃবি- উভয়ই দেশের নামে নামকরণ করা হয়েছে। পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অঞ্চলের নামে হলেও প্রথমটি সর্বদাই দেশের নামে।
১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি নাম এক ধরনের কাঠামোতে পরিবর্তন হলেও, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভিন্ন কাঠামোতে পরিবর্তন হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশে কোনো ত্রুটি আছে কি না, এ নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশের নামে বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানকে আঞ্চলিক পরিচয় থেকে বের করে এনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মর্যাদাপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তর করা। এটি একটি “Centre of Excellence” বা “National Hub for Research and Innovation” হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম সহায়ক।
১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। ‘নাম বাস্তবায়ন ফোরাম’ এর উদ্যোগে মানববন্ধন, প্রেস কনফারেন্স, এলাকাবাসীর জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ওয়াল গ্রাফিতি ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়, যা জাতীয় গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে।
যথাযথ সাড়া না পাওয়ায় ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা রেল ব্লকেড বরেন। সেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইং এর দায়িত্বরত অতিরিক্ত সচিব নুরুন আক্তার তিন সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায়, ৮ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনসহ বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি শাটডাউন করে দেন।
১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আশ্বস্ত করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘গাজীপুর’ থাকবে না এবং ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নামটিকে তিনি একটি ভুল কনসেপ্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। আওয়ামী লীগের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণা থেকে সরে আসার আহ্বানও জানান তিনি। সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে নামকরণের প্রস্তাবনা দেন তিনি। শিক্ষার্থীরা তার আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করে শাটডাউন শিথিল করেন।
তবে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে, ৬ মে শিক্ষার্থীরা আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ৭ মে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির বাস্তবায়নে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত চারটি নামের মধ্য থেকে দ্রুত একটি চূড়ান্ত করে বর্তমান পরিচিতি সংকট নিরসনের আহ্বান জানান।
প্রস্তাবিত নামগুলো হলো:
১. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (BUT)
২. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি (BUIT)
৩. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি (BUAT)
৪. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (BUFT)