সাম্য হত্যাকাণ্ড
বহিরাগতদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ১৯ মে ২০২৫, ১১:৫০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্যাম্পাসে যখন বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উঠছে, ঠিক তখনই বহিরাগত এনে বিক্ষোভ করার অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির নেতাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে ছাত্রদলের প্রশ্ন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য দলীয় প্রোগ্রামে যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসে অংশগ্রহণ করে, সেটা কী অপরাধ?
জানা গেছে, সাম্য হত্যার বিচার ও ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে ভিসি চত্বরে কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিউমার্কেট থানা, শাহবাগ থানা, তিতুমীর কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এই কর্মসূচি শেষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একটা বড় সংখ্যক অংশগ্রহণকারী বহিরাগত। তাদের একজনের নাম সোহান। যিনি শাহবাগ থানা ছাত্রদলের একজন কর্মী বলে এই প্রতিবেদককে জানায়৷ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদলের একজন ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। এজন্য আমরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আসছি।
গুলিস্তান থেকে আসা জিহাদ নামের আরেকন বলেন, আমি জানি না কি কারণে আনা হয়েছে। কার নেতৃত্বে এসেছে জানতে চাওয়া হলে উনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল দেন।
এদিকে বহিরাগত নিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আন্দোলন করার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহদি বলেন, যে বহিরাগতরা সাম্য ভাইকে নৃশংসভাবে খুন করলো, আমার বোনদের উপর ১৫ জুলাই বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল, সে বহিরাগতদের সাথে নিয়ে ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগের আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ শিক্ষার্থী আবিদ হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য ভাই খুন হয়েছেন বহিরাগতদের হাতে। সে কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে স্বাভাবিকভাবে দাবি উঠেছিল বহিরাগত মুক্ত নিরাপদ একটি ক্যাম্পাস। কিন্তু আমরা দেখেছি নিজেদের দলীয় প্রোগ্রামের জন্য ক্যাম্পাসে বহিরাগত আনা হয়েছে এবং এমন দাবি করা হচ্ছে যার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী একমত না। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান প্রশাসন একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন মহলের তীব্র বাধা এবং অসহযোগিতার মুখে কার্যকর করা যায়নি। যদি কার্যকর করা যেতো; তাহলে আমরা সাম্যকে হারাতাম না। কিন্তু এখন আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, যারা নিরাপদ ক্যাম্পাস নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেন নাই, তারাই এখন প্রশাসনকে নিরাপত্তাহীনতার জন্য দুষছেন। পাশাপাশি অপ্রাসঙ্গিক দাবি-দাওয়াও তুলছেন!
‘‘আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, যে বহিরাগতের ছুরির আঘাতে আমার ভাই সাম্য খুন হয়েছে, যে বহিরাগতরা রাত-বিরাতে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে, সেই বহিরাগত নিয়ে এসেই ক্যাম্পাসে অপ্রাসঙ্গিক দাবি-দাওয়া তুলছেন।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিম তামি বলেন, ছাত্রদলের প্রোগ্রামে বহিরাগত ইস্যু নিয়ে নোংরামি হচ্ছে। ছাত্রলীগের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীরা এভাবে মারা যায়নি। মার খেয়েছে কিন্তু মারা যায়নি। ছাত্রলীগের আমলে এই বহিরাগতরাই আমাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। তাদের একজন সহযোদ্ধা মারা গেছে তারা বিচার চাইতে আসবে না?
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, যে সাম্যের ডাকে জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে এসেছিল। তার হত্যার বিচারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রোগ্রামে যদি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করে সেটা অপরাধ? মানবিকভাবে বিবেচনা করে আমি এই প্রশ্ন রাখতে চাই।