‘মব’ সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের ওপর হামলাচেষ্টা ঢাবির একদল শিক্ষার্থীর

মোতালেব প্লাজায় হামলার সংবাদ সংগ্রহ

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাতুল
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাতুল © টিডিসি সম্পাদিত

রাজধানীর হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা শপিং সেন্টারে মোবাইলের এয়ারফোন কিনতে গিয়ে সেখানকার কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষার্থী। পরে তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিন সাংবাদিকের ওপর হামলার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের কাছে থাকা ঘটনার ভিডিও ফুটেজও মুছে ফেলতে বাধ্য করেন ওই শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টার দিকে শপিং সেন্টারটির ৬ তলার ব্যবসায় মালিক সমিতির অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. আবদুর রহমান, আমান উল্যাহ আলভী ও মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আজবার রাজ। 

এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থী পঙ্কজ চৌধুরী রাতুল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী, থাকেন জগন্নাথ হলে। এ ছাড়া ঘটনার শুরু থেকেই ওই মার্কেটের কর্মচারীদের সঙ্গে ঝামেলা তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২১ সালে ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গাঁজা সেবনের সময় রাতুলসহ তিনজনকে আটক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম। পরে তাদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছিল।

জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে মার্কেটের মোবাইলের একটি দোকানে যান রাতুলসহ ঢাবি দুই শিক্ষার্থী। এ সময় ওই দোকানের এক কর্মচারীর সঙ্গে রাতুলের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং পায়ের জুতা খুলে মারা চেষ্টা করেন দোকানের কর্মচারীকে। এ সময় দোকানের মালিক ও মার্কেটের কর্মচারীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও হামলাচেষ্টারও ঘটনা ঘটে তাদের। পরবর্তী সময়ে ঢাবির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে এনে দোকানে হামলা চালান। পরে খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ব্যবসায় মালিক সমিতির অফিসে সালিসে বসে তারা। সেখানে এ ঘটনার ক্ষতিপূরণ বাবদ ঢাবি শিক্ষার্থীদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয় এবং ঘটনার মিটমাট করা হয়।

তবে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের এ হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীরা পায়ের জুতা খুলে মারতে উদ্যত কিংবা গালাগাল করাই ঘটনার সূত্রপাত। তবে উল্টো ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে দোকানমালিককে। এ ছাড়া ঘটনার সময় ওই দোকান থেকে একটি আইফোন (১৬ প্রো ম্যাক্স) হারিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মালিক সমিতি বৈঠককালে ঘটনার সংবাদ কাভার করতে গেলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের ওপর তেড়ে যান রাতুলের নেতৃত্বে ঢাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় সাংবাদিকদের হাতে থাকা মোবাইল থেকে ভিডিও ফুটেজ জোরপূর্বক ডিলিট করায় এবং তাদের হেনস্তা করেন তারা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবদুর রহমান ও আমান উল্যাহ আলভী বলেন, ‘সমিতিতে বৈঠক চলাকালে কিছু ভিডিও ফুটেজ নেই। এ সময় সমিতির লোকজন কেন ভিডিও করছে জানতে চাইলে আমরা সাংবাদিক পরিচই দিই। তখন সেখানে থাকা ঢাবি শিক্ষার্থীরা আমাদের বাইরে নিয়ে আসেন এবং ‘মব’ তৈরি করে ভিডিও ডিলেট করতে বাধ্য করান।’

তারা আরও বলেন, ‘এমন বাধা দেওয়ার ঘটনা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা মনে করি। এ ঘটনা সাংবাদিকতার যথাযথ দায়িত্ব পালনে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে মনে করি।’

এ বিষয়ে ঘটনার সময় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটা আমার সামনে ঘটেনি। হয়তো আমি যাওয়ার পর ঘটেছে। ঘটনার বিষয়ে আমি একটা ভিডিও দেখেছি। ওই ছেলেকে আমি চিনি। তার নামও জানি। তবে আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের হেনস্তা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফু্দ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজে যায়নি। ব্যক্তিপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অনেকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ডেকে দুপক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির বিষয়টা মিটমাট করে দিতে পারে। তবে সাংবাদিকরা যদি আইনিভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে চান, নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।

জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট দেবাশীষ পাল বলেন, ‘এ ঘটনার বিস্তারিত জানি না। তবে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রক্টর অফিস থেকে বলা হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাতুল বলেন, ‘ঘটনার সময় তারা (সাংবাদিকরা) লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিও করছিলেন। তখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনারা কে, কোথায় থেকে এসেছেন। এরপর তারা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক পরিচয় দেন। পরিচয় দেওয়ার পর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা অনুমতি নিয়ে ভিডিও করছেন কি না? আপনারা এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছেন কেন? এর কারণটা কী?’

জোরপূর্বক ভিডিও ডিলেট করানোর বিষয়টি অস্বীকার করে রাতুল আরও বলেন, ‘জোর করে ভিডিও ডিলেট করানো বা এই ধরনের কোনো কিছুই ঘটেনি। তবে পরিস্থিতির কারণে হয়তো তাদের বলা হয়েছে যে ভিডিওটা যেন রিমুভ করে দেন।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে টিএসসিতে গাঁজা সেবনের সময় রাতুলসহ তিনজনকে আটক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম রাতুলসহ আরাফাত আহমেদ সাদ নামে একজন বহিরাগত ও ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসপিয়া আক্তারকে আটক করে। পরে তাদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়।